midway securities ltd.
স্টক * বন্ড * ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট * আইপিও * বাজার গবেষণা * ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
মাননীয় অর্থমন্ত্রী! এখনই আপনাকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আসতে হবে- যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যারা ব্যাংকের টাকা লুট করেছে, জনগণের টাকা লুট করেছে তাদের বিরুদ্ধে দেউলিয়া আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে এবং তাদের লাইফস্টাইলে হাত দিতে হবে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী! আপনি সরকারিভাবে একটি অ্যাসেট মানেজমেন্ট কোম্পানি করে সেই কোম্পানির মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা পরে বাজারে বিক্রি করে টাকা আদায়ের যে পরিকল্পনা করেছেন আমি মনে করি তা সফল হওয়ার নয় বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে যাবে। তাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা ঋণ পরিশোধ না করার আরও সুযোগ পেয়ে যাবে। তার চেয়ে বড় কথা হলো, এই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা যে জমি বন্ধক রেখেছে- মনে করুন যার বাজার মূল্য ৫ কোটি টাকা তা তারা দেখিয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা, এর সঙ্গে তারা যে পারসোনাল গ্যারান্টি দিয়েছে বা করপোরেট গ্যারান্টি দিয়েছে তার কোনো মূল্য নেই। তাদের বন্ধকী জমি বিক্রি করতে গেলে ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে দেখবেন এ জমিগুলো আরও অনেক জায়গায় বন্ধক দেওয়া আছে। অতএব মাননীয় অর্থমন্ত্রী! মহান পার্লামেন্টে আপনি বলেছেন, এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালকের যোগসাজশে এবং তাদের অনুগত ব্যাংকের এমডি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহায়তায় তারা গ্রাহকের টাকা নিজের নামে, বেনামে বা আত্মীয়স্বজনের নামে আত্মসাৎ করে বিদেশে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছে, বিলাসবহুল-জীবন যাপন করছে। কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুরে তারা বিশাল সম্পদ গড়ে তুলেছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী! ব্যাংক পরিচালক যারা ইচ্ছাকৃতভাবে টাকা ফেরত দিচ্ছে না তাদের ব্যাংকের পরিচালক থাকার অধিকার নেই। এদের খুঁজে বের করতে হবে মাননীয় অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকের প্রকৃত মালিক হলো হাজার হাজার শেয়ারহোল্ডার, তাদের স্বার্থ আপনাকে দেখতে হবে। ব্যাংক পরিচালকদের সর্বোচ্চ শেয়ার সংখ্যা হলো মাত্র ৩০%, ক্ষেত্রবিশেষ ৩৫%; কিন্তু প্রকৃত বিনিয়োগকারী যারা তারা ৭০%-এর বেশি শেয়ার ধারণ করে। এদের ছেড়ে দেওয়া যায় না মাননীয় অর্থমন্ত্রী। আপনাকে কঠোর হতে হবে। আপনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যার বিশেষ স্নেহভাজন এবং অনুগত একজন ব্যক্তি। তিনি আপনার ওপর আস্থা রেখেছেন। মাননীয় অর্থমন্ত্রী! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ দেউলিয়া আইনের কঠোর প্রয়োগ করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের থেকে সফলতার সঙ্গে ঋণ আদায় করেছে। দেউলিয়া আইন কঠোর প্রয়োগ বলতে বোঝায় যারা ইচ্ছাকৃতভাবে জনগণের টাকা লুটপাট করেছে তাদের লাইফস্টাইলে হাত দিতে হবে। যেমন চীনে যারা দেউলিয়া আইনের আওতায় পড়েছে তাদের গাড়ি-বাড়ি থাকবে না, তাদের সন্তানরা দামি স্কুলে পড়ালেখা করতে পারবে না, প্লেনে চড়তে পারবে না, এমনকি বুলেট ট্রেনেও চড়তে পারবে না। এ আইনের কঠোর প্রয়োগের ফলে তিন বছরের মধ্যে ৮০ পারসেন্ট ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি থেকে টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে মালয়েশিয়া, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন সরকারও দেউলিয়া আইনের কঠোর প্রয়োগ করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের থেকে টাকা আদায়ে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এক বছর আগে একই পদ্ধতিতে দেউলিয়া আইনের কঠোর প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং শুরু করেছেন। তাতে তিনি বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছেন এবং প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার ওপর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের থেকে টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। কারণ কেউই নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে চায় না।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী! আপনি যখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন আপনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সব ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির প্রতি ২ পারসেন্ট ডাউন পেমেন্ট দিয়ে একটি বড় ধরনের রিশিডিউল করে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো চালুর সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা বাস্তবে কী দেখলাম, মাত্র অল্পসংখ্যক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ডাউন পেমেন্ট দিয়ে তাদের খেলাপি ঋণ রিশিডিউল করেছে। ইন্টারেস্টিং হলো, তারা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো রি-অর্গানাইজড করে চালুর জন্য ব্যাংকের কাছে টাকা চেয়েছে। আমার প্রশ্ন, যেসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর বন্ধ হয়ে আছে তারা যেসব পণ্য উৎপাদন করত অথবা ব্যবসা করত তাদের পক্ষে কি এখন সম্ভব নতুন করে ইন্ডাস্ট্রি চালু করে বর্তমানে যারা ব্যবসা করে অনেক এগিয়ে আছে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা? যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ছিল তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না, তাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, তাদের কোনো অনেস্টি ছিল না। ব্যাংকব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল মনিটরিংয়ের সুযোগ নিয়ে, নিজস্ব ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় এবং বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের সরকার মনোনীত পরিচালক ও ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তারা ব্যাংক এবং জনগণের অর্থ লুটপাট করেছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী! এরা জেলে যেতে প্রস্তুত কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা এদের একেবারেই নেই। অতএব এদের বিরুদ্ধে বাস্তবসম্মত আইন প্রয়োগ করে টাকা আদায়ের অনুরোধ করছি। অন্যদিকে যেসব শিল্পপতি বিশেষ করে যাদের পুঁজিবাজারে লিস্টেড কোম্পানি আছে, ওই কোম্পানিগুলোয় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে এবং সেই কোম্পানিগুলোয় হাজার হাজার বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন, ওই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা উচ্চ সুদ অথবা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে যদিও ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে, তাদের প্রতি আপনাকে সদয় হতে হবে। কীভাবে তাদের সহযোগিতা করা যায়, তাদের ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে রাখা যায় সে ব্যাপারে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন এ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না হয়ে যায় সে ব্যবস্থাও আপনাকে নিতে হবে। কোনো শ্রমিক যাতে চাকরি না হারায়, কোনো বিনিয়োগকারী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকটা দেখে অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। দেশ ও জাতি আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। যেখানে করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি বিপদগ্রস্ত, সব শিল্পপতি তাদের ইন্ডাস্ট্রি এক প্রকার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে উৎপাদনও বন্ধ। এসব উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি যারা সব সময় ব্যাংকের টাকা সময়মতো পরিশোধ করেছে, তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব সফল শিল্পপতি ও তাদের প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে চান। যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে না তারা যদি এ সুযোগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংকের টাকা পেয়ে যায় তাহলে এটা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। মাননীয় অর্থমন্ত্রী! যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেনি তারা যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অর্থ সহযোগিতা না পায় সেদিকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে, কারও প্রতি অনুরাগ-বিরাগ না হয়ে কঠোরভাবে দেউলিয়া আইন প্রয়োগ করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের লাইফস্টাইলে হাত দিয়ে টাকা আদায় করতে সক্ষম হবেন। আপনার ওপর আস্থা রেখে আপনার সফলতা কামনা করছি।
0 Comments
Leave a Reply. |
Midway News TeamWe publish the latest stock market news to help you decide on your investment decisions. Archives
October 2024
Categories |