midway securities ltd.
স্টক * বন্ড * ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট * আইপিও * বাজার গবেষণা * ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
দেশের অর্থনীতিতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিকল্প নেই। সরকারেরও এ বিষয়ে আন্তরিকতা আছে। তবে বিনিয়োগ বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল নীতি জরুরি। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত আইনকানুন, বিভিন্ন নীতিকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা বারবার পরিবর্তন করা উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। পাশাপাশি কর আদায় বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান করদাতাদের ওপর চাপ না দিয়ে করের আওতা বাড়াতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের দেশে করদাতা ৪০ লাখের নিচে। এটি একেবারেই অযৌক্তিক। কর ফাঁকি রোধে বাড়াতে হবে প্রযুক্তির ব্যবহার। যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এসব কথা বলেন। তার মতে, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বন্ড মার্কেটকে করের বাইরে রাখা এবং একই আয়ের ওপর বারবার কর পরিহার করতে হবে। এছাড়াও শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ফ্লোর প্রাইস (নিম্নসীমা) এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো নিয়ে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মনির হোসেন। যুগান্তর: শেয়ারবাজারের অভিভাবক হিসাবে আগামী বাজেট ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কী ভাবছেন? অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত: শিল্পায়নে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি সংগ্রহের উপযুক্ত স্থান হলো শেয়ারবাজার। এর সঙ্গে অর্থনীতির সব খাতের সম্পর্ক রয়েছে। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য-সবই এখানে সম্পৃক্ত। আমার মতে, দেশের বাজেটে রেগুলার আইনকানুন, কর বা কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধার ঘনঘন পরিবর্তন ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থের পরিপন্থি। কারণ, নতুন বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে হয়। তারা একটি প্রজেক্টের পরিকল্পনা করার পর তা মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেন। ওই পরিকল্পনা অনুসারে ঋণ কিংবা শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহের চিন্তা করেন। সেক্ষেত্রে সরকারি নীতি পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর যদি তাদের পরিকল্পনা বদলাতে হয়, তাহলে বিনিয়োগের মুনাফা এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। ফলে খাতভিত্তিক নিয়মকানুন দীর্ঘমেয়াদি করা উচিত। এতে উদ্যোক্তারা বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাদের উৎপাদিত পণ্যমূল্যও নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখতে পারেন। অপরদিকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে রাজস্ব সংগ্রহের দরকার আছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির যে আকার, সেখানে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ খুবই কম। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে রাজস্ব আয়ের অনুপাত অত্যন্ত কম। সেটি বাড়ানো খুবই জরুরি। এজন্য করের আওতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব কোম্পানি বা ব্যক্তি কর দিচ্ছে না, তাদের নিয়ে কাজ করতে হবে। যারা কর দিচ্ছে, তাদের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে বেশি আদায়ের চেষ্টা না করে যারা দিচ্ছে না, তাদের কাছে পৌঁছানো জরুরি। করের আওতা বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ডিজিটাল বুথ স্থাপন এবং গ্রামগঞ্জে যেসব জায়গায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে নজর দেওয়া উচিত। দেশে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ কর দিলেও অর্থের জন্য অন্য কোথাও যেতে হয় না। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো থাকলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো থাকে। কর আদায় ভালো হয়। তাই আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সুস্থ ও সবল রাখতে হবে। এতে শেয়ারবাজার ভালো থাকে এবং কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে মানুষ ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত না রেখে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে। বাড়বে কোম্পানির বাজার মূলধন। আর দীর্ঘমেয়াদি ও স্থিতিশীল পলিসি থাকলে আরও নতুন কোম্পানি বাজারে আসবে। এতে ‘অটোমেটিক্যালি’ দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে। দিন শেষে এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের বিষয় হওয়া উচিত কর্মসংস্থান বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া। একজনও যেন বেকার না থাকে। তবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকার কর্মসংস্থান বাড়ালে রাজস্বের ওপর চাপ পড়ে। তাই বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং উৎপাদনশীল শিল্প খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে জোর দিতে হবে। এতে নতুন করে আরও করদাতা তৈরি হবে। একটি চাকরি পেলে তার আয় বিভিন্নভাবে (মানি সাইকেল) ঘুরতে থাকে। ওইসব জায়গা থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স আসতে থাকে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। যুগান্তর : শেয়ারবাজারের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে বাজেটে কী প্রত্যাশা করছেন? অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত : শেয়ারবাজারে অন্যতম খাত হলো মিউচুয়াল ফান্ড। বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে তিনটি জায়গায় কর দিতে হয়। আশা করছি, আগামী দিনে সেটি থাকবে না। অর্থবিলে বিষয়টি যুক্ত হচ্ছে। আমাদের দ্বিতীয় প্রত্যাশার জায়গা হলো বন্ড মার্কেট। এই বন্ডকে জনপ্রিয় করার জন্য যাতে জিরো কুপন বন্ডের মতো করের বাইরে রাখা হয়, সেটি কাম্য। এছাড়াও পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ থেকে বারবার কর নেওয়া হয়। মূলত কোম্পানি তার আয় থেকে কর দেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়। সেই লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের হাতে গেলে আবারও কর দিতে হয়। অর্থাৎ একই আয়ের ওপর দুই-তিনবার কর দিতে হয়। এটাকে আমরা পুনর্বিবেচনা করতে বলছি, যাতে একবার কর দিতে হয়। না হলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে আসতে চাইবে না। যুগান্তর : নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হিসাবে আপনার বিবেচনায় এই মুহূর্তে দেশের শেয়ারবাজারের জন্য চ্যালেঞ্জ কী? অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত : শেয়ারবাজারের জন্য চ্যালেঞ্জ তেমন কিছু নেই। তবে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া শেয়ারবাজারের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পণ্যের আমদানি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ সবকিছুর ওপর। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়ে তারল্যব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকের কাছে টাকা নেই। এতে সংশ্লিষ্টরা টাকা পাচ্ছে না। ব্যাংক নিজেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ কমিয়ে ফেলেছে। ডলারের দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে এলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যুগান্তর : শেয়ারবাজারে সম্ভাবনার দিক কী? অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত : বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ভালো ভালো বিদেশি বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে। সামনে আরও নতুন বিনিয়োগ আসছে। আমরা যেহেতু দেখছি এখানে তারল্য প্রবাহে সমস্যা, তাই বিদেশি বিনিয়োগ দ্রুত আনার চেষ্টা করছি। ব্যাংকগুলোকেও বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ করছি। যুগান্তর : দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইসে আছে বাজার। শিগগিরই এটি তোলার সম্ভাবনা আছে কি? অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত : ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে দেশের তারল্যব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। ওই বাস্তবতায় বাজারে অস্বাভাবিক অবস্থা ঠেকাতে ফ্লোর দেওয়া হয়েছিল। তবে যত প্রচার হচ্ছে, এটি তত সমস্যার নয়। কারণ, সূচক বাড়লে ফ্লোর প্রাইস এমনিতেই উঠে যাবে। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের অনেক ওপরে। ফলে এটি ঘোষণা দিয়ে তোলার দরকার নেই। যুগান্তর : বিভিন্ন মহল থেকে কথা আসছে, শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। এ প্রসঙ্গে কী বলবেন? অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত : শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন থাকবে। পৃথিবীর সব দেশেই এটি রয়েছে। কারণ, এটাই শেয়ারবাজারের ধর্ম। এক্ষেত্রে যখন সূচকের পতন হয়, তখন কেউ কেউ একে আস্থার সংকট বলে। কিন্তু কয়েক দিনের লেনদেন ও বাজার পরিস্থিতি দেখলে মনে হবে, বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে। এটাকেও আবার কেউ কেউ বলছে, আস্থা ফিরে আসছে। মূলত আমরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্যই কাজ করছি। তবে এতটুকু বলতে পারি, এই বাজারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। যুগান্তর : নির্বাচনি বছরে শেয়ারবাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে কি না? অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত : আমার কাছে মনে হয়, না। নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়ার কারণ দেখি না। আমি আশা করি, নির্বাচনি বছরে শেয়ারবাজার আরও ভালো থাকবে। যুগান্তর : বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেক কথা। এ ব্যাপারে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন? অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত : সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করছি। তবে একদিনে সবকিছু সম্ভব নয়। পর্যায়ক্রমে বাজারে প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ছে। নতুন প্রোডাক্ট আসছে। নতুন নতুন আইন ও বিধি তৈরি এবং বিদ্যমান আইনের কঠোর বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু উদাহরণ আপনারা দেখেছেন। অডিট কোম্পানির কারসাজি নিয়ে কথা আসছে। কিন্তু বর্তমানে এগুলো কমে যাচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সব প্রতিষ্ঠান ডিআরএস সিস্টেম থেকে তথ্য নিচ্ছে। আইপিওতে প্লেসমেন্ট বাণিজ্য হয় না। ইস্যু ম্যানেজারের অসাধু কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। সবকিছু মিলে আমি এই বাজারের জন্য সম্ভাবনা দেখছি। Source: jugantor
0 Comments
Leave a Reply. |
Midway News TeamWe publish the latest stock market news to help you decide on your investment decisions. Archives
December 2024
Categories |