midway securities ltd.
স্টক * বন্ড * ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট * আইপিও * বাজার গবেষণা * ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
উন্নত বিশ্বের করপোরেট সুশাসন নীতিমালার আদলে বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য করপোরেট গভর্ন্যান্স কোডসের (সিজিসি) খসড়া প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রস্তাবিত নিয়মে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ব্যাপক ও বিস্তারিত ডিসক্লোজারের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে অনেক বেশি তথ্য প্রদান করতে হবে। ব্যাখ্যা, নোট ও অন্যান্য উপায়ে কোম্পানির ব্যবসার প্রকৃত অবস্থা উপস্থাপনের এ পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের জন্য মৌলভিত্তি বিশ্লেষণ অনেক সহজ করবে বলে আশা করছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা।
প্রস্তাবিত করপোরেট গভর্ন্যান্স কোডস অনুসারে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির বার্ষিক ও প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস ১৯৮৭, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট (এফআরএ) ২০১৫ এবং আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় হিসাবমান অনুসরণ করে প্রণয়ন করতে হবে। বিএসইসির প্যানেলভুক্ত নিরীক্ষকের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে একটি নিরীক্ষা ফার্ম একাধারে সর্বোচ্চ তিন বছর কোনো কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করতে পারবে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, নিরীক্ষক ও অডিট ফার্মের পার্টনারকে কোম্পানি আইন ১৯৯৪, এফআরএ, সিকিউরিটিজ ও অন্যান্য আইন অনুসারে নিরীক্ষা করতে হবে। প্রান্তিক প্রতিবেদনসংক্রান্ত পর্ষদ সভার তিনদিন আগে এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশনকে জানাতে হবে। প্রান্তিক প্রতিবেদনসংক্রান্ত কনফারেন্স আয়োজন বা আর্নিং কলের বিষয়টিকে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। কোনো কোম্পানি আর্নিং কল করতে চাইলে তা কনফারেন্স আয়োজনের তিনদিন আগে কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দুটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে (বাংলা ও ইরেজি) এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতে হবে। প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের সাতদিনের মধ্যেই কনফারেন্সটি আয়োজন করতে হবে এবং সেখানে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও সুশাসন বিভাগের প্রধানকে (এইচআইএসি) অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে সিজিসির খসড়ায় বলা হয়েছে, জীবন বীমা কোম্পানি বাদে অন্য তালিকাভুক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিক শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে দুটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে (বাংলা ও ইরেজি) তা প্রকাশ করতে হবে। প্রান্তিক প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ বিচ্যুতি থাকলে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। অন্যদিকে জীবন বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রান্তিক শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন জমা ও প্রকাশ করতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে হিসাব বছর শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে জীবন বীমা কোম্পানি বাদে অন্য কোম্পানিগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। সেসঙ্গে নিরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশনের কাছে নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। আর জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে হিসাব বছর শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করতে হবে। এদিকে উপযুক্ত কারণ ও জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় কোম্পানি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা ও জমা দেয়ার সময়সীমা বাড়াতে পারবে কমিশন। তবে মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। বার্ষিক প্রতিবেদনসংক্রান্ত পর্ষদ সভার সাতদিন আগে স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশনকে এ-সংক্রান্ত তথ্য জানাতে হবে। বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) ১৪ দিন আগে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। পাশাপাশি কোম্পানির ওয়েবসাইটেও তা প্রকাশ করতে হবে। রেকর্ড ডেটের ৪৫ দিনের মধ্যে এজিএম আয়োজন করতে হবে। বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আয়োজনের ২১ দিন আগে এবং এজিএম আয়োজনের ১৪ দিন আগে স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেয়ারহোল্ডারদেও এ-সংক্রান্ত নোটিস পাঠাতে হবে। পাশাপাশি দুটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক (বাংলা ও ইরেজি) ও কোম্পানির ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করতে হবে। স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারিশ ও কমিশনের অনুমোদনক্রমে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এজিএম আয়োজন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ইলেকট্রনিক অ্যাটেনডেন্স ও ভোটিং সুবিধা থাকতে হবে। কোম্পানির নিবন্ধিত কার্যালয়ের আওতাধীন নগর, শহর কিংবা এলাকায় এজিএম আয়োজন করতে হবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের অনুমোদনক্রমে অন্য স্থানে এজিএম আয়োজন করা যাবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাধারণ সভা আয়োজন ও এ-সংক্রান্ত কার্যবিবরণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ (আইসিএসবি) গৃহীত বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়াল স্ট্যান্ডার্ড (বিএসএস) ২ ও ৩-এর বিধি অনুসরণ করতে হবে। তাছাড়া লভ্যাংশের ক্ষেত্রে কোম্পানিকে বিএসএস-৪ বিধির আওতায় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। যদি উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়, তাহলে কোম্পানির পর্ষদকে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ারের পরিমাণ ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশের পরিমাণ মূল্যসংবেদনশীল তথ্য হিসেবে প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে পর্ষদ সভার তারিখ থেকে এজিএমের তারিখ পর্যন্ত এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার হস্তান্তর কিংবা ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বলবত্ থাকবে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক ও আনুষঙ্গিক তথ্য প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক হলেও প্রস্তাবিত আইনে এর আওতা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করা হয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যবসার বিস্তারিত তথ্য, ছবিসহ কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের (এমডি ও সিইও, কোম্পানি সচিব, সিএফও, এইচআইএসি, এইচআইসিটি) প্রোফাইল, কোম্পানির বিভিন্ন উপকমিটির তালিকা ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ, স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের শর্তাবলি, পর্ষদ ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আচরণবিধি, নন-এক্সিকিউটিভ পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালকদের বেতন-ভাতার তথ্য, সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন, প্রান্তিক ও বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনসংক্রান্ত সভার নোটিস ও বিবরণী, সর্বশেষ ছয়টি প্রান্তিক ও পাঁচটি বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য, সিএসআরসংক্রান্ত তথ্য, সব ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, এজিএম-ইজিএমের নোটিস ও এজেন্ডা, সাবসিডিয়ারি কিংবা সহযোগী কোম্পানির আর্থিক বিবরণী, পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনের তথ্য, একীভূতকরণ-অধিগ্রহণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, আইপিও-রাইট ইস্যুর প্রসপেক্টাস, লভ্যাংশ নীতি, লভ্যাংশ দেয়া হয়নি এমন শেয়ারহোল্ডারদের তালিকা, পদত্যাগকৃত পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীদের তালিকা, কোম্পানি, পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীদের সব ধরনের আইন নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা লঙ্ঘনের তথ্য, শেয়ারধারণের বিস্তারিত তথ্য, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার লেনদেনের যাবতীয় তথ্য ও করপোরেট সুশাসন পরিপালনের তথ্য তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির বহিঃনিরীক্ষকের বিষয়ে সিজিসিতে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির বহিঃনিরীক্ষক সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ভ্যালুয়েশন, ফিন্যান্সিয়াল ইনফরমেশন সিস্টেম ডিজাইন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন, কোম্পানির বুককিপিং ও আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত, ব্রোকার-ডিলার সেবা, অ্যাকচুরিয়াল সার্ভিস, অভ্যন্তরীণ ও বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম, সিজিসি পরিপালনসংক্রান্ত সার্টিফিকেটসহ স্বার্থগত দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে, এমন কোনো কার্যক্রম করতে পারবে না। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট বহিঃনিরীক্ষক ফার্মের পার্টনার ও কর্মীদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার ধারণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরা (পুত্র, কন্যা, স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবা, ভাই-বোন, জামাতা-পুত্রবধূ) সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারবে না। তাছাড়া কোম্পানির এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য বহিঃনিরীক্ষকের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মৌলভিত্তি বিশ্লেষণ সহজতর করতে নিরীক্ষিত, অনিরীক্ষিত সব আর্থিক প্রতিবেদনে সংযুক্তি হিসেবে কোম্পানির কার্যক্রম, তারল্য, নগদপ্রবাহ, সচ্ছলতা, মুনাফা ও ভ্যালুয়েশনের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সব আর্থিক রেশিও উপস্থাপন করতে হবে। উল্লেখ্য, খসড়া সিজিসিতে ডিসক্লোজার সম্পর্কিত পূর্ববর্তী কোনো বাধ্যবাধকতার অবসায়নের প্রস্তাব নেই। বিনিয়োগকারী ও বাজারের স্বার্থে এগুলোকে আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বণিক বার্তাকে বলেন, প্রস্তাবিত সিজিসি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আদলে করা হয়েছে। তা বাস্তবায়নের আগে আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো এত ব্যাপক ডিসক্লোজারে কতটা সক্ষম, এগুলোও বিবেচনা করতে হবে। ছোট কোম্পানিগুলোর ব্যয়ও বাড়বে। আমরা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে তাদের মতামত চেয়েছি। সবার কাছ থেকে পাওয়া মতামত একত্র করে বিএসইসির কাছে পাঠানো হবে। এদিকে বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সিজিসি পরিপালনের প্রাথমিক সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া হতে পারে। ডিসক্লোজারের পরিধি বিবেচনা করে এটি পরিপালনের জন্য কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে দুই বছর সময় দিতে চায় বিএসইসি। প্রস্তাবিত সিজিসি বাস্তবায়ন হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত হবে এবং মৌলভিত্তি বিশ্লেষণে বিনিয়োগকারীরা পর্যাপ্ত তথ্য পাবেন বলে মনে করছেন দেশের আর্থিক বিশ্লেষকরা। bonikbarta.net
0 Comments
Leave a Reply. |
Midway News TeamWe publish the latest stock market news to help you decide on your investment decisions. Archives
September 2024
Categories |