midway securities ltd.
স্টক * বন্ড * ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট * আইপিও * বাজার গবেষণা * ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে যোগ দিয়েছেন। এর আগে সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিনের দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন। সম্প্রতি বণিক বার্তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ও বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে আগামী দিনের প্রত্যাশা ও করণীয় সম্পর্কে জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান রাহাত গত বছরের শুরু থেকে দেশের পুঁজিবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চলতি বছর দরপতন আরো তীব্র হয়েছে। সর্বশেষ নভেল করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ থেকে পুঁজিবাজারের অবস্থা শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। দেশের পুঁজিবাজারের এ অবস্থাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
পুঁজিবাজার নিম্নমুখী হওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে। যদি পলিসিগত ভুল-ত্রুটি থাকে, অর্থনীতিতে যদি সমস্যা থাকে কিংবা জনগণের কাছে যদি বিনিয়োগযোগ্য অর্থ না থাকে তাহলে বাজার নিম্নমুখী হয়। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী হয়েছে। আমাদের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে একটি বিষয় আমি লক্ষ করেছি যে আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগেও বিএসইসির নিজস্ব ভবন এবং প্রয়োজনীয় অনেক আইনকানুন ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এবং আগের কমিশনে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের প্রচেষ্টায় কমিশনের নিজস্ব ভবন এবং অনেক আইনকানুন হয়েছে। আইনকানুন করতে গেলে অনেক সময় ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে এবং অনেক সময় সেটি বাজারবান্ধব হয় না। যদি এ ধরনের কোনো ভুল-ত্রুটি থাকে তাহলে আমরা সেগুলো ঠিক করার ব্যবস্থা নেব। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আস্থা। আমরা যেসব পরিকল্পনা নিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়িত হলে সামনের দিনগুলোতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এবং আস্থা ফিরে আসবে। এমনকি দেশী-বিদেশী অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, যারা এতদিন বাজার থেকে দূরে ছিলেন। বাজারে ফেরার জন্য তাদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখেছি সেটি আমাকে বাজার সম্পর্কে আশাবাদী করে তুলেছে। তাছাড়া পুঁজিবাজার বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে এটি কিন্তু শেয়ার কেনার সময়। তাই আমি পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী। পুঁজিবাজার নিয়ে আপনার লক্ষ্য ও পরিকল্পনাগুলোর বিষয়ে জানতে চাই? নভেল করোনাভাইরাস-পরবর্তী প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের বেশকিছু উদ্যোগ নিতে হবে। কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে কীভাবে আর্থিক সুবিধা দেয়া যায়, সেটি আমরা দেখছি। তাছাড়া করপোরেট করহারে কিছু ছাড়ের বিষয়ও রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব। আমি বন্ডের বিষয়ে জোর দিতে চাই। বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার অনেক কমে গেছে। আমরা যদি ৮-৯ শতাংশ রিটার্নে বন্ড ছাড়তে পারি তাহলে জনগণ তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগের বিপরীতে কিছু বাড়তি অর্থ পাবে। অন্যদিকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিভিন্ন খাতের যেসব কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাও এর মাধ্যমে তাদের নগদ অর্থের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে আমরা যদি বন্ডের বিষয়টি আরো সহজ করে দিতে পারি, তাহলে এটি জনপ্রিয়তা পাবে। আমি সুকুকের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে চাইছি। ইসলামিক ফিন্যান্সে সুকুকের মাধ্যমে অনেক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। আমি খুব দ্রুতই এটি চালু করতে চাইছি। এরই মধ্যে দেশী-বিদেশী অনেকেই সুকুকের বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে দেশে বড় ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ডেরিভেটিভস, অপশনস, ফিউচার মার্কেটের মতো পণ্য আমাদের পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে চাই। আমি ইকুইটিনির্ভরতা থেকে পুঁজিবাজারকে বের করে নিয়ে আসতে চাইছি। অবশ্য আমাদের বাজারে এ ধরনের অ্যাডভান্সড বিষয়ে কাজ করার মতো দক্ষ পেশাদারদেরও ঘাটতি রয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতিতে এগোতে হবে। কিন্তু আমি এটা শুরু করব। এসব নতুন পণ্যের বিষয়ে ব্যাপক আকারে প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নেয়া হবে। যাতে করে বিনিয়োগকারীসহ বাজারসংশ্লিষ্ট সবাই এসব পণ্যের সুবিধা-অসুবিধাসহ বিস্তারিত সবকিছু সম্পর্কে জানতে পারে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। আইপিও প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক উদ্যোক্তাই পুঁজিবাজারে আসতে চান না। তাছাড়া আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার পর অনেক কোম্পানির পারফরম্যান্সে অধোগতি দেখা যায়। সার্বিকভাবে আইপিও নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? এ বিষয়গুলো আমার নজরেও এসেছে। আমি দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র কয়েকদিন হলো। আমি এটা নিয়েই কাজ করছি। আইপিও প্রক্রিয়ার সময় কমিয়ে আনাসহ অন্যান্য যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়ে গেলেই তখন আমরা এর সমাধানের জন্য কাজ করতে পারব। আমাদের নতুন কমিশনের সদস্য যারা আছেন তারা এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাদের পড়াশোনাও এ বিষয়ে। ফলে আমরা সবাই মিলে এ সমস্যাগুলো দূর করতে পারব বলে আশা করছি। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নির্ভর হওয়ার কারণে আমাদের পুঁজিবাজারে অস্থিরতাও বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে নতুন কমিশনের ভূমিকা কী হবে? এ বিষয়টি নিয়ে দুদিন ধরে অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এমনকি বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও আমদের এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী। সবাই এ বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে যে বাজার এভাবে নিম্নমুখী থাকতে পারে না। এ অবস্থা বজায় থাকলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি। ফলে সামনের দিনগুলো আমাদের পুঁজিবাজারে দেশী-বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে বলে আমি মনে করি। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অনেক দেশে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও পুঁজিবাজার চালু রয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি অটোমেটেড না হওয়ার কারণে আমাদের দেশে পুঁজিবাজার দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। পুঁজিবাজারের পরিপূর্ণ ডিজিটাইজেশনে নতুন কমিশন উদ্যোগ নেবে কি? মূলত পরিপূর্ণ ডিজিটাইজেশন ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এতদিন ধরে পুঁজিবাজার বন্ধ রয়েছে। আমরা যদি বর্তমান অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বিষয়গুলো ঠিক করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে যদি করোনার মতো কোনো পরিস্থিতি আসে তখন আমাদের অবস্থা আরো শোচনীয় হবে। তাই আমাদের পরিপূর্ণ অটোমেশন ও ডিজিটাল প্রযুক্তির দিকে চলে যেতে হবে। আমি কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সফটওয়্যার ও ডিজিটাল প্রযুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এবং ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) মধ্যে আমরা একটি অনলাইন ব্যবস্থা চালু করব। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গেও আমরা সিআইবিটা অনলাইন করার চেষ্টা করছি। দেশে পুঁজিবাজার চালু হবে কবে এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা উত্কণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। তাছাড়া বাজার চালু হলেও ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণে লেনদেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। পুঁজিবাজার চালু এবং ফ্লোর প্রাইস থাকবে কিনা, এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য সবাই নতুন কমিশনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে? সারা পৃথিবীতে কেউ পুঁজিবাজার বন্ধ রাখেওনি আর রাখতে পারেনি। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক কিছুর সংযুক্তি রয়েছে। ফলে আমাদের এখানেও আর বোধ হয় বাজার বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। জুন মাসে আমাদের পুঁজিবাজার খুলে দিতেই হবে। আর ফ্লোর প্রাইস একটি সাময়িক ব্যবস্থা। আশা করছি খোলার পর পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং ফ্লোর প্রাইসের আর কোনো প্রয়োজন থাকবে না। এক্ষেত্রে আমরা সবসময় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থটাই দেখব। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে আপনার বার্তা.... বিনিয়োগকারীদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, আমরা সঠিক উপায়ে ন্যায্যতার সঙ্গে আইনকানুন ঠিকঠাক করে বাজারটাকে সুসংহত করার যে চেষ্টা করছি তার ওপর আস্থা রাখার জন্য। সামনের দিনগুলোতে অর্থবাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি। Source: BonikBarta
0 Comments
Leave a Reply. |
Midway News TeamWe publish the latest stock market news to help you decide on your investment decisions. Archives
November 2024
Categories |