midway securities ltd.
স্টক * বন্ড * ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট * আইপিও * বাজার গবেষণা * ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
ফুটওয়্যার তথা পাদুকার বৈশ্বিক বাজারে চলমান মন্দার মধ্যেও রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও জুতা বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। তাতে বেড়েছে কোম্পানিটির মুনাফা ও শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস)।
বুধবার অনুষ্ঠিত এপেক্স ফুটওয়্যারের ২৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর মঞ্জুর বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরটি পাদুকা শিল্পের জন্য ছিল অনেকটা মন্দার বছর। এ সময় বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পাদুকার রপ্তানি মূল্য ৬ শতাংশ কমেছে। আলোচিত বছরে ভারতের চামড়াজাত পাদুকা রপ্তানি কমেছে প্রায় ২৯ শতাংশ; চিনের ২২ শতাংশ। কিন্তু এমন প্রতিকূল পরিবেশেও এপেক্স ফুটওয়্যার রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও বিক্রি বেড়েছে, যার হার প্রায় ১২ শতাংশ। এপেক্স ফুটওয়্যারের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত বছরে কোম্পানির পণ্য বিক্রির পরিমাণ ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা হয়েছে। সুদ ও কর পূর্ববর্তী মুনাফা বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কোম্পানির নিট মুনাফায়। এ বছর কোম্পানিটির নিট মুনাফা ও ইপিএস বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। ইপিএস ৭ টাকা ২১ পয়সা থেকে বেড়ে ১১ টাকা ৫৪ পয়সা হয়েছে। এজিএমে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর জানান, বাংলাদেশ বিশ্বে ৬ষ্ঠ বৃহত্তম পাদুকা উৎপাদনকারী দেশ। বছরে এখানে ১ কোটি ২৮ লাখ জোড়া জুতা উৎপাদিত হয়। আর রপ্তানি হয় প্রায় ৬ কোটি জোড়া জুতা। তবে রপ্তানিকৃত জুতার বড় অংশই হাওয়াই চপ্পল ও রাবার বা সিনথেটিক জাতীয় জুতা। এপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি বলেন, চামড়ার জুতা রপ্তানির দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২২তম। বাংলাদেশ তাই বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দেওয়া বা পণ্যের মূল্যকে প্রভাবিত করার মতো অবস্থানে নেই। বরং অন্যকে বা বিশ্ববাজারকে অনুসরণ করে টিকে থাকতে হয়। তার মতে, স্থানীয় পর্যায়ে জুতা উৎপাদনের পরিমাণ কম বলে বিদেশি ক্রেতারা এখানে এসে জুতা কিনতে আগ্রহী হন না। কিন্তু তৈরি পোশাকের বেলায় কিন্তু ক্রেতাদেরকে এদেশে আসতেই হয়। না এসে তাদের উপায় নেই। এক সময় চামড়াজাত পণ্য বিশেষ করে পাদুকার ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বর্তমানে ১৪১ টির মতো প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পরিমাণে জুতা রপ্তানি করে থাকে। আরও ৪০টি কোম্পানি পাইপলাইনে আছে। এভাবে নতুন নতুন কোম্পানি আসতে থাকলে প্রতিযোগিতার ফলে মান ও সক্ষমতা আরও বাড়বে। তখন বিশ্ববাজারেও এ দেশের চামড়া পণ্যের প্রভাব বাড়বে নি:সন্দেহে। এপেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, সর্বশেষ অর্থবছরে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা রপ্তানি করে ১৫০ কোটি ডলার আয় হয়েছে। সরকার ২০১২ সাল নাগাদ এ খাতে রপ্তানি-আয়ের পরিমাণ ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে দীর্ঘমেয়াদী নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা বড় বড় বিদেশী ব্র্যান্ডকে তাদের পণ্য বাংলাদেশ থেকে উৎপাদন করিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে সাভারের ‘চামড়া শিল্প পার্ক’ যেখানে এখন পর্যন্ত দূষণ নিয়ন্ত্রণের গ্রহণযোগ্য ন্যূনতম মান অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী অবশ্য চামড়া শিল্পের সম্ভাবনার বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বেশ কিছু কারণে আমাদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক গবেষণা সংস্থার মতে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত এদেশে ৭ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। বাণিজ্য লড়াইয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় ক্রেতারা এখন চিন থেকে পন্য আমদানির ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করছে। এজিএমে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ইউনিট-১ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোমেন ভুঁইয়া এবং ইউনিট-২ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজন পিল্লাই ২০১৮-১৯ হিসাববছরের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আলোচনা করেন। উল্লেখ, এপেক্স ফুটওয়্যারের এক নাম্বার ইউনিটে মূলত রপ্তানি বাজারের জন্য জুতা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে ইউনিট-২ এ উৎপাদিত জুতা দেশের বাজারে বিক্রি করা হয়। এজিএমে মোমেন ভুঁইয়া বলেন, আগামী বছর আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী অবস্থান। তিনি বলেন, গত এক-দেড় বছরে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগীদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, চিন ও ভিয়েতনামে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক দর পতন হয়েছে। কিন্তু সে অনুসারে ডলার ও ইউরোর সঙ্গে টাকার বিনিময় মূল্য তেমন কমেনি। এর ফলে আলোচিত দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কিছুটা অসময় অবস্থায় পড়তে হবে। বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নিয়ে কিছু ব্যবস্থা নিলে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য তা অনেক সহায়ক হবে। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তিনি সরকারি ছুটির ইস্যুকে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিদেশে পণ্য রপ্তানির একটি পিক মৌসুম থাকে। ঘটনাচক্রে আগামী তিন বছর আমাদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব তথা দুটি ঈদ এই মৌসুমের মধ্যে পড়ে যাবে। এর ফলে ১০ দিন উৎপাদন বন্ধ থাকবে। এই ঘাটতি পুষিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য রপ্তানি নিশ্চিত করতে তাই ঈদের আগে-পরে ওভারটাইম দিয়ে বাড়তি সময় কাজ করিয়ে নিতে হবে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেশ কিছুটা বাড়বে। নতুন মজুরি কাঠামোর কারণেও ব্যয়ের উপর চাপ পড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মুনাফার প্রবৃদ্ধি আগামী বছরেও ধরে রাখার ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেন মোমেন ভুঁইয়া। তিনি বলেন, উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে আমরা আমাদের মুনাফার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার চেষ্টা করবো। রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত শুটিং কমপ্লেক্সে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কোম্পানির চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। সভায় কোম্পানির পরিচালক মনিজা মঞ্জুর, কোম্পানি সচিব এস এম শাহজাহান, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা দিলীপ কাজুরি, কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন।
0 Comments
Leave a Reply. |
Midway News TeamWe publish the latest stock market news to help you decide on your investment decisions. Archives
October 2024
Categories |