midway securities ltd.
স্টক * বন্ড * ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট * আইপিও * বাজার গবেষণা * ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের কোটিপতিদের বড় অংশই পুঁজিবাজারে নেই। সম্পদশালী এসব ব্যক্তি তাদের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকির পরিবর্তে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকা কিংবা তারও বেশি আমানত রয়েছে এমন কোটিপতির সংখ্যা ৯৩ হাজারেরও বেশি। আর দেশের পুঁজিবাজারে কোটি টাকা কিংবা তারও বেশি বিনিয়োগ রয়েছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ২৩ হাজার। এ হিসাবে মাত্র এক-চতুর্থাংশ কোটিপতির বিনিয়োগ রয়েছে পুঁজিবাজারে। শেয়ার রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে গত এক বছরে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো থাকায় এবং করোনায় বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ কমে আসার পাশাপাশি ব্যাংক আমানতের সুদহার কমে আসায় দেশের অনেক কোটিপতি পুঁজিবাজারে যুক্ত হয়েছেন বলে স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে। তবে পুঁজিবাজারে কোটিপতি বিনিয়োগকারীর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে, যদি সুশাসন নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া ভালো আইপিও আনা ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমেও বড় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যায়।
এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাজার পরিস্থিতি আগের চাইতে এখন ভালো। অধিকাংশ কোম্পানি ১০ শতাংশ বা তারচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের রিটার্নও বেশি। এতে করে যাদের কাছে সঞ্চয় রয়েছে, তাদের উচিত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা। তবে আপনারা যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন, ক্রমান্বয়ে বাজারের টার্নওভার ও বাজার মূলধন কিন্তু বাড়ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, এখানে বিনিয়োগ বাড়ছে। যদিও স্থানীয় বিনিয়োগই বেশি। তাদের বিনিয়োগ বাড়ার কারণেই গত এক বছরে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি বাজার মূলধন বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাজার মূলধন জিডিপির ১৭ শতাংশে রয়েছে, যা এই বছরের শেষ নাগাদ ২০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করছি। এসইসি চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা ফিরেছে। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনও ধাপে ধাপে উন্নতি হচ্ছে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাবেন। আমরা বন্ড মার্কেট চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। বন্ডের রিটার্ন ৭ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। জিরো কুপন বন্ডে বিনিয়োগে কর অব্যাহতির সুযোগ রয়েছে। রিটার্ন ও কর সুবিধা বিবেচনায় এগুলোতে স্বয়ক্রিয়ভাবে মানুষের বিনিয়োগ আসা শুরু হবে। শেয়ার রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) হিসাব অনুযায়ী, গত ২০ মে পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ২৬ লাখ ৬০ হাজার ৪৮০টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) রয়েছে। এরমধ্যে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৯৯টি বিও হিসাব কখনোই ব্যবহার হয়নি। আর ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৬টি বিও হিসাবে শূন্য ব্যালেন্স রয়েছে। এ হিসেবে শেয়ার রয়েছে এমন সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা হচ্ছে ১৪ লাখ ২৭ হাজার ১৮৫টি। সক্রিয় বিও হিসাবধারীর মধ্যে ২৩ হাজার ১৩৭টি বিও হিসাব রয়েছে, যেগুলোতে এক কোটি টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। কোটিপতি বিনিয়োগকারীদের এই সংখ্যা তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়েছে। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এক কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত পোর্টফোলিও মূল্য রয়েছে এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৭০০টি, যাদের বেশিরভাগই ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী। আর ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ মূল্য থাকা পোর্টফোলিওধারীর সংখ্যা ২ হাজার ২১২টি। এছাড়া পুঁজিবাজারে ১০ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকা এমন পোর্টফোলিওধারীর সংখ্যা ১ হাজার ২২৫টি, যাদের বড় অংশই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। এই শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটির হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। বর্তমানে সক্রিয় বিও হিসাবধারীর মধ্যে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যাদের পোর্টফোলিও মূল্য কোটি টাকার। সংখ্যার বিচারে পুঁজিবাজারের তুলনায় ব্যাংকে কোটিপতি বেশি থাকলেও শতাংশের হিসাবে তা অনেক কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ব্যাংক হিসাবের শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ হচ্ছে কোটিপতি গ্রাহক। এ সময়ে ব্যাংকে মোট গ্রাহকের সংখ্যা হচ্ছে ১১ কোটি ৫৮ লাখ ১২ হাজার ৯৬৬টি। ওই সময় পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যার ৪৩ দশমিক ১৬ শতাংশ ছিল কোটিপতিদের। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে দ্বিধা ও শঙ্কায় ভোগেন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সাধারণ মানুষ এখনো ব্যাংকে সঞ্চয় রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। গত এক বছরে ব্যাংক ব্যবস্থায় সামগ্রিক সুদের হার কমে এলেও এখনো সঞ্চয়পত্রসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে উচ্চ সুদ পাওয়া যাচ্ছে এবং কোনো ঝুঁকিও নেই। এছাড়া পুঁজিবাজারে সুশাসনের অভাব, কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে আস্থাহীনতা এবং কারসাজিকারক ও পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিচার না হওয়ায় দেশের বেশিরভাগ মানুষ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চান না। যদিও দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে জনসাধারণের বিস্তৃত অংশগ্রহণসহ একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার অপরিহার্য। তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) গঠন করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পার হলেও এখনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। পুঁজিবাজারে কোটিপতিসহ সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীর সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়ে বিএসইসির সাবেক কমিশনার ও শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, যাদের কোটি টাকা রয়েছে, তারা বিনিয়োগের রিটার্ন সম্পর্কে ধারণা রাখেন। তারা যখন মনে করেন পুঁজিবাজারে ব্যাংকের তুলনায় রিটার্ন বেশি আসবে, কোম্পানির আয় ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ও ব্যাংকের এফডিআরের রিটার্ন যখন কমে যায় তখন তারা ধীরে ধীরে ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ফিরবেন। আমি নিশ্চিত যে, গত এক বছরে পুঁজিবাজারে কোটিপতি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে। কারণ গত ৭/৮ মাস ধরে বাজার ভালো হচ্ছে, তাই এ সময়ে অনেকেই পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন। তবে আরও অনেক বেশি মানুষকে পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করা সম্ভব যখন তাদের টাকা লোকসানের টেনশনটা কমানো যাবে। কারণ দুইবার অনেক মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই টেনশনটা যখন কমানো যাবে তত আস্তে আস্তে করে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে বলে জানান এসইসির এই সাবেক কমিশনার। আরিফ খান জানান, অবশ্যই সুশাসন ও কোম্পানির নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে বিশ^াসযোগ্যতা যখন বাড়বে এবং কারসাজিকারকদের শাস্তির আওতায় আনা হবে তখনই পুঁজিবাজারের পরিধি বাড়বে। তবে এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, একদিনে করা সম্ভব নয়। এরমধ্যে অনেক কিছুই শুরু হয়ে গেছে। ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। Source: deshprotikhon
0 Comments
Leave a Reply. |
Midway News TeamWe publish the latest stock market news to help you decide on your investment decisions. Archives
December 2024
Categories |