midway securities ltd.
স্টক * বন্ড * ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট * আইপিও * বাজার গবেষণা * ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
বড় অংকের লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বেশ সুনাম রয়েছে। তাই বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারে এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ থাকে। বাংলাদেশেও স্থানীয় কোম্পানির তুলনায় অধিকাংশ বহুজাতিক কোম্পানিই লভ্যাংশ দেয়ার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সে হার ক্রমান্বয়ে কমছে। ব্যবসার ব্যয় বাড়ার প্রভাবে মুনাফা কমে যাওয়ার পাশাপাশি অর্থ প্রত্যাবাসনে সমস্যায় পড়ার কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের পরিমাণ কমছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে গত বছর ডলার সংকটের কারণে বেশকিছু কোম্পানিকে লভ্যাংশ, রয়্যালটি ফিসহ তাদের সম্পর্কিত পক্ষের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে দেশে ব্যবসারত আরো অনেক বহুজাতিক কোম্পানিকেই। গত বছর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডলার সংকটের কারণে বিদেশে অর্থ পাঠাতে সমস্যায় পড়েছিল বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড (বিএটিবিসি), রেকিট বেনকিজার (বিডি) লিমিটেড ও ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার লিমিটেড। তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর গত তিন হিসাব বছরের লভ্যাংশ দেয়ার পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময়ে ছয়টি কোম্পানির ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও ধারাবাহিকভাবে কমেছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে বিএটিবিসি, বার্জার পেইন্টস, গ্রামীণফোন, ম্যারিকো, ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার লিমিটেড ও রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ লিমিটেড। তামাক খাতের বহুজাতিক কোম্পানি বিএটিবিসি ২০২১ হিসাব বছরে ২৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল, যা ছিল কোম্পানিটির মুনাফার ৯৯ দশমিক ২১ শতাংশ। পরের হিসাব বছরে কোম্পানিটির লভ্যাংশ কমে দাঁড়ায় নগদ ২০০ শতাংশে, যা মুনাফার ৬০ দশমিক ৪২ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২৩ হিসাব বছরে ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ আরো কমে ১০০ শতাংশে দাঁড়ায়। এ সময় কোম্পানিটি মুনাফার মাত্র ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা করে। যদিও এ সময়ে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির আয় ও মুনাফা বেড়েছে। বহুজাতিক রঙ উৎপাদক বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ ২০২১ হিসাব বছরে ৩৭৫ শতাংশ, পরের হিসাব বছরে ৪০০ ও গত হিসাব বছরে ৪০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও ছিল যথাক্রমে ৬৪ দশমিক ৬২, ৬৩ দশমিক ৮২ ও ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট রূপালী চৌধুরী। বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ কমার কারণ জানতে চাইলে রূপালী চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘একদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে আমাদের পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। অন্যদিকে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে কাঁচামালের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। যদিও বাড়তি এ ব্যয় আমরা ভোক্তার ওপর দিতে পারছি না। কারণ তাতে পণ্যের চাহিদা আরো কমে যেতে পারে। পাশাপাশি বিদ্যুতের দামও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এসব কারণে ব্যবসার খরচ বেশ বেড়েছে। তার ওপর কর্মীদের বেতন-ভাতাও বাড়াতে হয়েছে। এসব কারণে আমাদের মুনাফা কমে গেছে। সেই সঙ্গে লভ্যাংশ প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও পড়তে হয়েছে সমস্যায়। সব মিলিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতিতে বেশি লভ্যাংশ না দিয়ে সে অর্থ এখানে পুনর্বিনিয়োগ করাটাই ভালো।’ তবে বর্তমানে আগের তুলনায় পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে এবং ডলার সংকটও অনেকাংশে কেটেছে বলে জানান তিনি। টেলিযোগাযোগ খাতের বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন ২০২১ হিসাব বছরে ২৫০ শতাংশ, ২০২২ হিসাব বছরে ২২০ ও ২০২৩ হিসাব বছরে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে ১২৫ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরগুলোয় কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও ছিল যথাক্রমে ৯৮ দশমিক ৮৯, ৯৮ দশমিক ৭০ ও ৫১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় গ্রামীণফোনের আয় ও মুনাফা প্রবৃদ্ধি হলেও লভ্যাংশ কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ম্যারিকো বাংলাদেশ ২০২১ সালে বিনিয়োগকারীদের ৯০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। পরের হিসাব বছরে এটি ৮৫০ শতাংশ ও সর্বশেষ ২০২৩ হিসাব বছরে তা আরো কমে ৭৫০ শতাংশে দাঁড়ায়। এ তিন বছরে কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও ছিল যথাক্রমে ৯১ দশমিক ১৯, ৭৫ দশমিক ৩৪ ও ৬১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির আয় ও মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ছিল। অবশ্য ডলার সংকটের কারণে লভ্যাংশের অর্থ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রত্যাবাসন করতে না পেরে তা চলতি মূলধন হিসেবে ব্যবহারের জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে কোম্পানিটি। রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের ২০২১ হিসাব বছরে ১ হাজার ৬৫০ শতাংশ ও এর পরের হিসাব বছরে ৯৮০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও ছিল যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৪৭ ও ৭০ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০২৩ হিসাব বছরের লভ্যাংশ এখনো ঘোষণা করেনি কোম্পানিটি। তবে ২০২২ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় আয় কিছুটা বাড়লেও কমেছিল মুনাফা। দেশে ডলার সংকট শুরু ২০২১ সালের জুনে। পরের বছর তা আরো তীব্র হয়ে ওঠে। ২০২৩ সালজুড়েও অব্যাহত ছিল এ সংকট। তখন আমদানি ব্যয়ে রাশ টানার উদ্যোগ নেয় সরকার। আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলায় শর্ত কঠোর করার পাশাপাশি এলসি খোলা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয় দেশের অনেক ব্যাংক। এতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও লভ্যাংশের অর্থ বাইরে পাঠাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। বর্তমানে রেমিট্যান্সের কল্যাণে ডলার সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও সংকট এখনো কাটেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১১৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের বিনিয়োগ প্রত্যাহার (ডিজইনভেস্টমেন্ট) হয়েছে। এর মধ্যে মূলধন প্রত্যাবাসন, বিপরীতমুখী বিনিয়োগ এবং মূল কোম্পানি ও আন্তঃকোম্পানিকে দেয়া ঋণও রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১১৯ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালিকাভুক্ত এক বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে কম-বেশি সবাইকে লভ্যাংশ প্রত্যাবাসনে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এ অবস্থায় প্রধান কার্যালয় থেকে লভ্যাংশ না দেয়ারও পরামর্শ এসেছে। যদিও স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এতে পুঁজিবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, এ শঙ্কায় শেষ পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছি।’ ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার ২০২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। পরের হিসাব বছরে কোম্পানিটি ২৪০ শতাংশ ও ২০২৩ হিসাব বছরে নগদ লভ্যাংশ দেয় ৩০০ শতাংশ। আলোচ্য তিন হিসাব বছরে কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও ছিল যথাক্রমে ১০০ দশমিক ৪৬, ৩৯ দশমিক ৫৮ ও ৬০ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০২২ হিসাব বছরে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির আয় কমলেও মুনাফা বেড়েছিল। সর্বশেষ হিসাব বছরেও কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে। ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসুদ খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেকের মতো আমাদেরও ব্যবসা কমেছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্নভাবে ব্যয় কমিয়ে আমরা মোটামুটি মুনাফা করেছি। সামনের দিনগুলোয় অর্থনীতি কেমন যাবে তা নিয়ে সবার মধ্যেই অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ কারণে লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা রক্ষণাত্মক নীতি অনুসরণ করছি।’ দেশের পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বরাবরই আকর্ষণ একটু বেশি। উত্তরাধিকার সূত্রে বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারের মালিকানা পেয়ে বড় অংকের মূলধনি মুনাফার ঘটনাও রয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। ফলে স্থানীয় ও বিদেশী দুই শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের কাছে এসব শেয়ারের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। তাছাড়া পুঁজিবাজারের ওঠনামায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এসব শেয়ারের। গত বছর ফ্লোর প্রাইসের কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরও দীর্ঘ সময় ধরে একই স্থানে স্থির ছিল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে গেলে লভ্যাংশ কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে মুনাফা বাড়া সত্ত্বেও যদি লভ্যাংশ কমে যায় তাহলে অন্য কারণ থাকতে পারে। যেমন ডলার সংকটের ফলে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশের অর্থ বিদেশে প্রত্যাবাসনে সমস্যায় পড়ায় হয়তো বা কম লভ্যাংশ দিচ্ছে। তাছাড়া ব্যবসা সম্প্রসারণ করলে সেক্ষেত্রে অনেক সময় কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ কম দিয়ে সে অর্থ ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিগুলোর এ ধরনের ঘোষণা নজরে আসেনি। Source: Bonikbarta.net
0 Comments
Leave a Reply. |
Midway News TeamWe publish the latest stock market news to help you decide on your investment decisions. Archives
October 2024
Categories |