স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করার আগে একটি বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরি করুন

​বিনিয়োগ পরিকল্পনা হল এমন একটি নথি যা আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্য, কৌশল এবং কর্মের রূপরেখা তৈরি করে। এটি আপনাকে আপনার আর্থিক পরিস্থিতি স্পষ্ট করতে, আপনার ঝুঁকি সহনশীলতা সংজ্ঞায়িত করতে এবং আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলি পরিচালনা করতে সহায়তা করতে পারে।

এটি আপনাকে আপনার পোর্টফোলিওর কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করতে এবং আপনার অগ্রগতির মূল্যায়ন করতেও সাহায্য করতে পারে।
 
একটি বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরি করতে, আপনি এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে পারেনঃ

আপনার আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ন করুনঃ আপনার আয়, ব্যয়, সম্পদ এবং দায়বদ্ধতার একটি স্পষ্ট চিত্র থাকা উচিত। আপনার একটি জরুরি তহবিলও থাকা উচিত যা অপ্রত্যাশিত ঘটনার ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন থেকে ছয় মাসের জীবনযাত্রার খরচ বহন করতে পারে। ক্রেডিট কার্ড বা ব্যক্তিগত ঋণের মতো যে কোনও উচ্চ সুদের ঋণও আপনার পরিশোধ করা উচিত, কারণ এগুলি আপনার সঞ্চয় এবং আয়কে হ্রাস করতে পারে।
 
আপনার বিনিয়োগের উদ্দেশ্যগুলি নির্ধারণ করুনঃ আপনার নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্যগুলি চিহ্নিত করা এবং অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, যেমন অবসর গ্রহণের জন্য সঞ্চয় করা, বাড়ি কেনা বা শিক্ষার জন্য অর্থায়ন করা। প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ, প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার সময়কাল এবং আপনার বিনিয়োগের উপর আপনার প্রত্যাশিত রিটার্ন নির্ধারণ করা উচিত।
 
আপনার ঝুঁকি সহনশীলতা নির্ধারণ করুনঃ আপনার বিনিয়োগে আপনি কতটা অনিশ্চয়তা বা সম্ভাব্য ক্ষতি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তা পরিমাপ করা উচিত। সাধারণত, ঝুঁকি সহনশীলতা যত বেশি হবে, পোর্টফোলিও তত বেশি আক্রমণাত্মক হতে পারে এবং এর বিপরীতও হতে পারে। আপনার ঝুঁকি সহনশীলতা আপনার বয়স, আয়, লক্ষ্য, সময়কাল এবং ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করতে পারে। আপনার ঝুঁকি সহনশীলতা মূল্যায়ন করতে এবং আপনার পোর্টফোলিওর জন্য সর্বোত্তম সম্পদ বরাদ্দ নির্ধারণ করতে আপনি অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন বা কোনও আর্থিক পরিকল্পনাকারীর পরামর্শ নিতে পারেন।

আপনার বিনিয়োগের কৌশল বেছে নিনঃ আপনার লক্ষ্য, ঝুঁকি সহনশীলতা এবং সময়ের উপর ভিত্তি করে আপনি কীভাবে আপনার অর্থ বিনিয়োগ করতে চান তা আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আপনার বিনিয়োগের বৈচিত্র্য, ফি, কর এবং তারল্যের মতো বিষয়গুলিও বিবেচনা করা উচিত। আপনার প্রয়োজন এবং পছন্দের সঙ্গে মানানসই ধরনের সিকিউরিটিজ বা তহবিল আপনার বেছে নেওয়া উচিত। প্রতিটি সিকিউরিটিজ বা তহবিলে বিনিয়োগ করার আগে আপনার গবেষণা ও বিশ্লেষণ করা উচিত। আপনার বিনিয়োগকৃত সিকিউরিটিজের পারফর্মেন্স হিস্ট্রি  , মূল্যায়নের অনুপাত, বৃদ্ধির সম্ভাবনা, ডিভিডেন্ট ইল্ড ঝুঁকির মাত্রা এবং ফি-র মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত।
 
আপনার প্রস্থান কৌশল নির্ধারণ করুনঃ আপনি কখন এবং কীভাবে আপনার বিনিয়োগ বিক্রি করতে চান বা আপনার লক্ষ্যের জন্য সেগুলি ব্যবহার করতে চান তা আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।  আপনার বিনিয়োগকৃত সিকিউরিটিজ কিছু বিষয় অথবা নিয়মের উপর ভিত্তি করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। যেমন, টার্গেট রিটার্ন, স্টপ-লস লেভেল, সময়সীমা ও বাজারের অবস্থা। আপনার বিনিয়োগ বিক্রির ক্ষেত্রে ট্যাক্স রেট –এর প্রভাব ও ফি সম্পর্কেও আপনার বিবেচনা করা উচিত।
 
আপনার পরিকল্পনা পর্যালোচনা এবং আপডেট করুনঃ আপনার পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করা উচিত এবং আপনার বিনিয়োগের বর্তমান কর্মক্ষমতা এবং সম্ভাবনার সঙ্গে এর তুলনা করা উচিত। আপনার পরিস্থিতি বা লক্ষ্য পরিবর্তিত হলে আপনার পরিকল্পনাও আপডেট করা উচিত। আপনার পোর্টফোলিও আপনার ঝুঁকি সহনশীলতা এবং বিনিয়োগের উদ্দেশ্যগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং পুনরায় ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
 
এগুলি আপনাকে একটি বিনিয়োগ পরিকল্পনা লিখতে সাহায্য করার জন্য কিছু পদক্ষেপ, তবে এগুলি সম্পূর্ণ বা সুনির্দিষ্ট নয়। আপনার নিজের পরিস্থিতি এবং লক্ষ্য অনুযায়ী আপনার পরিকল্পনা টি কাস্টমাইজ করা উচিত। প্রয়োজনে আপনার পেশাদার পরামর্শও নেওয়া উচিত।