midway securities ltd.
স্টক * বন্ড * ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট * আইপিও * বাজার গবেষণা * ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট
লাভ হোক বা লোকসান– শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা প্রতিবার শেয়ার কেনার সময় সরকারকে উৎসে কর দিচ্ছেন। আবার করপোরেট কর হিসেবে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কর দিচ্ছে। লভ্যাংশ নেওয়ার সময় সাধারণ শেয়ারহোল্ডারের কাছ থেকে উৎসে কর কেটে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ একই আয়ের ওপর বহুবার কর দিতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। নতুন করে বিনিয়োগকারীদের আর কর দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর একটি প্রতিনিধি দল নতুন করে বিনিয়োগকারীদের ওপর করের বোঝা না বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন। আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে মূলধনি মুনাফা আরোপ করা হতে পারে– এমন খবরে যখন শেয়ারবাজারে লাগাতার দরপতন চলছে, তখন এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে এমন অনুরোধ জানানো হয়েছে। জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে গত শনিবার সন্ধ্যায় এফবিসিসিআইর প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাতে তাঁর গণভবনে সাক্ষাৎ করতে যায়। এ সময় শেয়ারবাজার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিফা আয়শা খান এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে বৈঠকে কেউ ছিলেন না। সূত্র জানায়, বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় মূলত আসন্ন বাজেটে কর নিয়ে ব্যবসায়ীদের নানা প্রস্তাব নিয়ে। এর মধ্যে শেয়ারবাজার প্রসঙ্গ আসে। এফবিসিসিআইর একজন প্রতিনিধি বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা এক আয়ের ওপর বহুবার কর দিচ্ছেন। কখনও করপোরেট কর হিসেবে আবার কখনও লভ্যাংশ নেওয়ার সময় কর দিচ্ছেন। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি হলে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে আরও বেশি কর দিতে হচ্ছে। ফলে নতুন করে আর কর বাড়ানো উচিত হবে না। শেয়ারবাজারের চলমান সংকট কাটিয়ে কীভাবে এ বাজারকে প্রধানমন্ত্রীর ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নে ব্যবহার করা যায়, তার দিকনির্দেশনা তৈরি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী এমন কমিটি গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, এফবিসিসিআইর প্রতিনিধি দলের এক সদস্য বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে উন্নীত করতে হলে বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দেশে এখনকার তুলনায় অনেক বেশি শিল্পায়ন করতে হবে। বিগত পাঁচ দশকে শিল্পায়নে উদ্যোক্তাদের নির্ভরতা ছিল ব্যাংকের ওপর। পরবর্তী ধাপের উন্নয়নের জন্য ব্যাংক-নির্ভর থাকলে চলবে না। আগামীর উন্নয়নের জন্য পুঁজির প্রধান উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের বিকল্প আর কিছু নেই। ১৪ শতাংশ সুদ দিয়ে এখন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মুনাফা করা সম্ভব নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে এফবিসিসিআইর প্রতিনিধিরা বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শিল্প করলে তাঁকে মূলধনের সঙ্গে সুদও ফেরত দিতে হয়। এভাবে বিনিয়োগ করে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়েছে। ব্যাংকও অর্থ ফেরত না পেয়ে সংকটে পড়েছে। এভাবে পুরো ব্যাংক খাত এখন হুমকির মুখে। উন্নত বিশ্বে ব্যাংক-নির্ভর অর্থায়ন দিয়ে শিল্পায়ন হয় না, শিল্পায়ন হয় পুঁজিবাজারের মাধ্যমে। এখান থেকে পুঁজি নিলে মূলধন ফেরত দেওয়ার দরকার পড়ে না। শুধু ব্যবসা ঠিকমতো পরিচালনা করে মুনাফার অংশ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। এভাবে শিল্পায়ন টেকসই হয়, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারমুখী করার জন্য সরকারের নীতিসহায়তা দরকার উল্লেখ করে তারা বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তাদের ধারণা, অতালিকাভুক্ত কোম্পানির তুলনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমালে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে। প্রকৃত অবস্থা হলো– অতালিকাভুক্ত সিংহভাগ কোম্পানি কর দেয় না। কোম্পানি লাভজনক হলেও কর ফাঁকি দিতে লোকসান দেখায়। তালিকাভুক্ত হলে সে সুযোগ থাকে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠান কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। তাছাড়া বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে হলে মুনাফা দেখাতে হয়। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে যায়। তবে কোম্পানির উদ্যোক্তারা যদি দেখেন, শেয়ারবাজারে এসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মুনাফা শেয়ার করে তারা কম মুনাফা পাচ্ছেন, তাহলে তারা বাজারমুখী হতে আগ্রহী হবেন না। এ জন্য অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকা দরকার। সরকারি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করে ব্যবসায়ীরা বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোকেও শেয়ারবাজারে বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত হওয়ার নীতি করা প্রয়োজন। প্রতিবেশী দেশসহ সারাবিশ্বে বিদেশি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার নিয়ম আছে। বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ার না আসায় মানুষ এ বাজারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম সমকালকে জানান, বৈঠকে ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি, ডলারের সংকট, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, কাস্টমসে অটোমেশন এবং কর ও ভ্যাট বিষয়ে নানা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের বক্তব্য ধৈর্য সরকারে শুনেছেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী নেতা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম সমকালকে বলেন, সরকারের বর্তমান করনীতি আরও বেশি কর আহরণ। উন্নয়নের এ ধাপে কর আহরণ বাড়ানো দরকার। তবে বিনিয়োগ ও রপ্তানি না বাড়ানো হলে সরকারের রাজস্ব আয় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত হবে না। প্রধানমন্ত্রীকে তারা বিষয়টি বলেছেন। বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাড়াতে সরকারকে করনীতি যুগোপযোগী করার অনুরোধ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারবিষয়ক এফবিসিসিআইর স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা এদিকে পুঁজিবাজারের মূলধন শিল্পায়নে বিনিয়োগ করতে সরকারি, বেসরকারি কোম্পানি ও শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি। গতকাল রোববার সকালে পুঁজিবাজার ও বন্ড-বিষয়ক এফবিসিসিআইর স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান তিনি। মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের শিল্পায়নে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। শিল্প মালিকদের জন্যও এটি তুলনামূলক সহজ অর্থায়ন উৎস। তবে দুঃখের বিষয় হলো, খুবই অল্পসংখ্যক বড় কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ ‘এক্সিট’ (শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নেওয়া) সুবিধা থাকা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, পুঁজিবাজার উন্নত হলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে। পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ মুনতাকিম আশরাফ বলেন, পুঁজিবাজারে ছোট বিনিয়োগকারীর তুলনায় বড় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অনেক কম। এ অবস্থা বদলাতে হবে। পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। Source: Samakal
0 Comments
Leave a Reply. |
Midway News TeamWe publish the latest stock market news to help you decide on your investment decisions. Archives
January 2025
Categories |